দেশের সব জেলাতেই কমবেশি উৎপাদন হয় দই। কিন্তু স্বাদের ভিন্নতা আর গুণগত মান যাচাইয়ে বগুড়ায় তৈরী দই জিআই স্বিকৃতিপ্রাপ্ত। ফলে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাহিরের দেশেও সমাদৃত বগুড়ার দই। জিআই স্বিকৃতিপ্রাপ্ত এই দই প্রচার প্রচারণায় বগুড়া নাম ব্যবহার হলেও সবচেয়ে বেশী এবং প্রকৃত সুস্বাদু তৈরী হয় জেলার শেরপুর উপজেলায়।
দইয়ের জন্য বিখ্যাত এই উপজেলা শহর শেরপুরে প্রায় দুইমাস যাবত প্রচন্ড মন্দা প্রভাব পড়েছে দই ও মিষ্টি ব্যবসার উপর। সুসজ্জিত দই মিষ্টির শোরুম গুলো দিনাতিপাত করছে প্রায় ক্রেতাশূণ্য অবস্থায়। একদিকে কমে গেছে স্থানীয়ভাবে বিক্রি, অন্যদিকে চাহিদা না থাকায় কমে গেছে বাহিরে সরবরাহ দেওয়া। ফলে চরম দুর্দিন যাচ্ছে দই মিষ্টি ব্যবসায়ী এবং দই তৈরির কারিগরসহ সহযোগী শ্রমিকদের।
সুনামধন্য দই মিষ্টি বিক্রি শোরুমের অন্তত দশ জন স্বত্বাধিকারীদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, বেচাবিক্রি কমে গেছে চার তৃতীয়াংশ। এ কারণে বেতন দিতে না পেরে কারিগর এবং কর্মচারিদের পালা করে ছুটি দিতে হচ্ছে। এরপরও বেতন, দোকানভাড়া এবং বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে ভূর্তকি দিচ্ছেন বলেও তাঁরা জানান। এছাড়াও সপ্তাহে অন্তত একদিন দই উৎপাদন বন্ধ থাকে। ফলে ওই দিন কারিগরদের বসে রেখেই বেতন দিতে হয়।
এদিকে দই মিষ্টির চাহিদা কমে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন দুধ ও মাটির সড়া-হাঁড়ি বিক্রেতারা। উপজেলা শহর শেরপুরে দই মিষ্টির উপর ভিত্তি গড়ে উঠেছে বিশাল দুধের বাজার। জেলার কয়েকটি উপজেলার দইমিষ্টি ব্যবসায়ীদের আগমণে এক ঘন্টার দুধের বাজারে বিক্রি হয় প্রায় তিন লাখ টাকার দুধ। কিন্তু চাহিদা না থাকায় দুধ ক্রয়ে আগ্রহ নাই দই মিষ্টি ব্যবসায়ীদের। এতেকরে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার খামারীরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় দুই মাস হলো প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায়। এতেকরে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারীদের।
কথা হয় অন্তত ১৫ জন দুধ বিক্রেতার সঙ্গে, তাদের ভাষ্য, শুধু শেরপুর নয় অন্য উপজেলার দই মিষ্টি ব্যবসায়ীরা এই বাজারে আসে দুধ ক্রয়ের জন্য। কিন্তু প্রায় দুই মাস যাবত তাঁরা দুধ ক্রয়ে অনিহা দেখাচ্ছে। আবার তাঁরা দুধ নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু ন্যায্য দাম দিচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেন।
হতাশা প্রকাশ করে খামারীরা জানান, বতর্মানে দুধের যা দাম পাচ্ছেন তাতে রীতিমতো দিশেহারা। কারণ গরুর চিকিৎসা খাদ্যে অর্থাৎ সব ধরনের পরিচর্যায় ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ফলে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। দুধের বাজার ধসে সিন্ডিকেট কাজ করছে কি-না প্রশাসনদের খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান।
শেরপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর সুত্র জানান, যদি এর পিছনে কোনো সিন্ডিকেট কাজ করে, তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।