অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলেন ছাগলনাইয়া উপজেলা যুবলীগ নেতা দিদারুল আলম ভূঁইয়া টিপুসহ সাত জন। বিয়ের প্রলোভনে ফেলে নারী ধর্ষণের অভিযোগ এনে ভুক্তভূগী মহিলা রেহানা আক্তার সুমি বাদী হয়ে ১৮ জুলাই ফেনী মডেল থানায় দিদারুল আলম ভূঁইয়া টিপুকে প্রধান আসামি করে মোট ৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছে। অভিযুক্তরা হল উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম ভূঁইয়া টিপু, উপজেলা আওয়ামীলীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক মোঃ হানিফ বাবুল, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সবুজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোঃ সেলিম, মোহাম্মদ সামির,দিদারুল আলম ভূ্ঁইয়া টিপুর স্ত্রী লাভলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাসুদ রানা।মামলার বাদী রেহানা আক্তার (সুমি) তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন ৩/৬/২০০১ তারিখে ১ নং আসামী দিদারুল আলম ভূঁইয়া টিপু বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী পৌরসভার পূর্বপাড়া পেট্রোবাংলা
কবির আহমদের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় দীর্ঘ দুই মাস তালাবদ্ধ করে আটক করে রাখে পরবর্তীতে দুই মাস পর আমাকে ফেনী শহরের পুরাতন পুলিশ কোয়াটার এ ১- নং আসামির গাড়ির ড্রাইভার ইমনের বাসায় নিয়ে গিয়ে ৬ মাস রাখে এই সময়ে তাকে বিয়ের
কথা বললে ১/৩/২০২১ পেট্রোবাংলার বৃত্তিকা ভবনে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আমাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় উঠে।
সেখানে দীর্ঘ চার মাস আমার সাথে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক করে এর ফলে আমি গর্ভধারণ করলে টিপু আমাকে ম্যাক্স হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায়। পরীক্ষায় গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হলে ১৪/০৩/২০২১ ঔষধ প্রয়োগের মাধ্যমে আমার পেটের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলে। এরপর পুনরায় গর্ভধারণ করলে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক গর্ভধারণ করলে আমাকে আবারো ম্যাক্স হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায় পরীক্ষার পর আবারো গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হলে ০৯/০৭/২০২১ আমার পেটের দ্বিতীয় সন্তানও নষ্ট করাতে বাধ্য করে।
বিজ্ঞাপন
এরপর আমি তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকলে ১১/০৭/২০২১ ১-৭ নং আসামীগন পরিবারের সহযোগিতায় আমাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে আমি অসুস্থ অবস্থায় খালাতো বোনের বাসায় আশ্রয় নিই। পরে গত ১৫/০৭/২০২১ ওই বাসার তৃতীয় তলার এক ভাড়াটিয়ার ফোন কলের মাধ্যমে জানতে পারি ১ নং আসামী ২-৬ নং আসামি গনের সহযোগিতায় ঘরের সকল আসবাবপত্র নিয়ে যায় গত ১৬/০৭/২০২১ আমি বাসায় এসে দেখি বাসার কোন জিনিস পত্র নেই।বর্তমানে টিপু কে ফোন কলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিয়ের কথা বললে আমার সাথে কোন সম্পর্ক নেই এবং আইনের আশ্রয় নিলে হত্যার হুমকি দেয়। এর আগে ১-৭ নং আসামীগণ আমাকে দিয়ে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে ১০ নং ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল হক মানিকের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক সাংবাদিক সম্মেলন ও ফেনীর আদালতে নারী নির্যাতনের অভিযোগে একটি সি আর মামলা নং ১৯২ /২০২০ মামলা করায়।উক্ত ঘটনায় আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।উল্লেখ্য একই নারী রেহানা আক্তার সুমি কে নিয়ে ইতিপূর্বে উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এফ এম আজিজুল হক মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে গত ২৩ মার্চ ২০২১ ফেনীতে একটি সংবাদ সম্মেলন করে।সংবাদ সম্মেলনে রেহানা আক্তার সুমি তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার ১০ নং ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল হক মানিকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, প্রতারণা, হয়রানি, সাজানো মামলায় ফাঁসানো ও হুমকি ধামকির অভিযোগ এনে ও বিচার দাবীতে গৃহবধু রেহানা আক্তার সুমী সংবাদ সম্মেলন করে।ঐদিন বিকেলে শহরের একটি হোটেলে রেহানা আক্তার সুমী সংবাদ সম্মেলনে তার প্রতি নির্যাতন, নিপীড়ন, হুমকি ধামকি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ফেনী-২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি ও ফেনীর প্রশাসনের কাছে দাবী জানিয়েছিলেন।
রেহানা আক্তার সুমী নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা পিটিশন মামলা সিআইডির কাছে হস্তান্তরেরও দাবী জানান।
লিখিত বক্তব্যে রেহানা আক্তার সুমী আরো বলেন ঘোপাল ইউনিয়নের মুহুরীগঞ্জে আমার স্বামীর বাড়ী। দাম্পত্য জীবনে অশান্তি ও স্বামীর বেপরোয়া জীবনের প্রতিকার চেয়ে ঘোপাল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল হক মানিকের শরণাপন্ন হই। এটাই আমার জীবনের কাল হয়েছে। চেয়ারম্যান আজিজুল হক মানিক আমাকে বিয়ের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে টানা ৩ বছর ধর্ষণ করেছে। আমাকে বিয়ে না করে ছলচাতুরির মাধ্যমে আমার সর্বস্ব লুটে নিয়ে আমাকে মেরে ফেলতে ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়ে বিভিন্নভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।পরে আমাকে ফেনীর পেট্রেবাংলার একটি বাসায় মানিকের ক্যাডার বাদশা-১, বাদশা-২, এনাম, ফারুক, সবুজকে দিয়ে দেড়মাস আটকিয়ে রাখে। এরপর মানিক আমাকে ঢাকায় নেওয়ার কথা বলে তার গাড়ীতে করে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার একটি নিভৃত পল্লীতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে ভারতে পাচার করার ষড়যন্ত্র করে। এর আগে ঘোপালে বালুমহালের প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারিতে এক প্রবাসী বাদশার ক্যাডারদের হাতে নিহত হয়। ডিবি পুলিশ মোবাইল টেকিং এর মাধ্যমে আসামী ধরতে গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে।
ফেনীর পুলিশ কোর্য়াটারে আবদুর রহিম প্রকাশ আফছার (আজিজুল হক মানিকের পরিচিত) আমাকে তার বাসায় আটকিয়ে মানিকের নির্দেশে পতিতা বৃত্তিতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। এরপর ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মানিকের ক্যাডার ইকবালের মাধ্যমে প্রাইভেটকার পাঠিয়ে আমাকে চট্টগ্রাম যেতে বলে।
আমি চট্টগ্রাম গেলে আজিজুল হক মানিক পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পুলিশের সাথে আঁতাত করে আমাকে ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ফাঁসানো হয়। ঐ মামলায় আমি জেলে যাই। পরে জানতে পারি থানার তদন্তকারী অফিসার এই মামলায় আজিজুল হক মানিককে ২ নং আসামী ও ইকবালকে ৩ নং আসামী করে চার্জশীট প্রদান করে।
বর্তমানে মানিক আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি ও হত্যা করে লাশ ঘুম করার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। আমি মানিকের কবল থেকে মুক্ত হতে ও ধর্ষণসহ নানারকম হয়রানির ন্যায় বিচারের দাবাীতে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা কামনা করছি।ভুক্তভূগী রেহানা আক্তার সুমির সেই সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি তখন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রীকাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।