যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুর পর থেকে তালেবান নেতা মোল্লা বারাদার কখনও ক্যামেরা থেকে দূরে সরে যাননি। অথচ সম্প্রতি তিনি বেশ কয়েকদিন ধরেই প্রকাশ্যে আসছেন না।
আফগানিস্তানের এই নতুন উপ-প্রধানমন্ত্রীকে গত কয়েকদিন ধরে প্রকাশ্যে দেখা না যাওয়ায় তার অবস্থান সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে।
বিভিন্ন রিপোর্ট অনুসারে, বারাদার হয় মৃত, গুরুতর আহত বা লো-প্রোফাইল বজায় রেখেছেন তথা বিশ্রামে আছেন। তবে এর মধ্যে কোনটি সত্য, কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
তালেবান সব ঠিক আছে বললেও বিভিন্ন রিপোর্ট কিন্তু বলছে যে সবকিছু হয়তো ঠিক নেই।
তালবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তাদের নিজেদের মধ্যেই ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে তর্ক চলাকালীন গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে শোনা যাচ্ছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার এবং তালেবানের নতুন মন্ত্রিসভার এক সদস্যের মধ্যে গত সপ্তাহে আফগান প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে তর্ক-বিতর্ক ঘটেছিল।
তালেবানের একটি সূত্র বিবিসি পশতুকে জানিয়েছে যে, শরণার্থী মন্ত্রী এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা খলিল উর রহমান হাক্কানির সঙ্গে বারাদারের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছিল। এসময় তাদের অনুসারীরাও একে অপরের সাথে ঝগড়া করেছিল এবং গোলাগুলিও হয়েছিল।
তালেবান সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, ওই ঝগড়ার পর বারাদার কাবুল ছেড়ে কান্দাহারে চলে গেছেন।
সূত্র জানায়, নতুন উপপ্রধানমন্ত্রী বারাদার তাদের অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো নিয়ে অসন্তুষ্ট হওয়ায় এই ঝগড়ার সূত্রপাত ঘটে। এরপর তাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়।
গোলাগুলিতে বারাদার আহত হয়েছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ চলছে বলে বেশ কিছুদিন ধরেই এমন খবর পাওয়া যাচ্ছিল, যদিও তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত মাসে তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটিকে ‘ইসলামিক আমিরাত’ বলে ঘোষণা করে।
তারা যে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে, সেখানে সবাই পুরুষ এবং জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতারা রয়েছেন।
কাতার-ভিত্তিক একজন জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতা নিশ্চিত করেছেন যে, গত সপ্তাহেও একবার তর্কবিতর্ক তৈরি হয়েছিল।
আফগানিস্তানে তালেবানের বিজয়ে কৃতিত্ব কার হবে, সেই নিয়েই বিরোধের শুরু। জানা যাচ্ছে, বারাদার মনে করেন যে, তার মতো যারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়েছেন, কৃতিত্বটা তাদেরই। তবে তালেবানের অন্যতম জ্যেষ্ঠ একজন নেতা পরিচালিত হাক্কানি গ্রুপের সদস্যদের মত, যুদ্ধের মাধ্যমেই তারা এই বিজয় পেয়েছেন।
প্রথম তালেবান নেতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়েছিল মোল্লা বারাদারের। ২০২০ সালে তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার টেলিফোনে কথা হয়। তার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার চুক্তিতে তালেবানের পক্ষে তিনি স্বাক্ষর করেন।
সেই সময় আফগান বাহিনী ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হাক্কানি নেটওয়ার্ক সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ কিছু হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। এই গ্রুপকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন বলে তালিকাভুক্ত করেছে। তালেবানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন এই দলের নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানি।
গুজব রয়েছে যে, গত সপ্তাহের শেষের দিকে বড় ধরণের বিরোধ তৈরি হয়েছিল, তখন তালেবানের সবচেয়ে বেশি পরিচিত ব্যক্তিদের একজন মোল্লা বারাদার আড়ালে চলে যান। সামাজিক মাধ্যমে ধারণা করা হচ্ছিল যে, তিনি হয়তো মারা গেছেন।
তবে তালেবান সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, বিতণ্ডার পর বারাদার কাবুল ত্যাগ করেছেন এবং কান্দাহারে চলে গেছেন।
সোমবার প্রকাশ হওয়া বারাদারের একটি কথিত অডিও বার্তায় তালেবানের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতাকে বলতে শোনা যায় যে, তিনি একটি সফরে রয়েছেন। ‘আমি এই মুহূর্তে যেখানেই থাকি না কেন, আমরা সকলে ভালো আছি,’ তিনি বলছেন। বেশ কয়েকটি তালেবান ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এই অডিও বার্তা যাচাই করে দেখতে পারেনি বিবিসি।
ওদিকে, তালেবান বলে আসছে যে, তাদের মধ্যে কোন বিতণ্ডা নেই এবং বারাদার নিরাপদে আছেন। কিন্তু তিনি বর্তমানে কি করছেন, তা নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক বিবৃতি দিয়েছে।
তালেবানের এক মুখপাত্র বলেছেন, তালেবান সুপ্রিম লিডারের সঙ্গে দেখা করতে বারাদার কান্দাহারে গিয়েছেন। আবার পরবর্তীতে বিবিসি পশতুকে তিনিই বলেন যে, বারাদার ‘ক্লান্ত এবং বিশ্রামে থাকতে চান’।
অনেকে মনে করেন, তালেবানের বক্তব্য নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। ২০১৫ সালে এই গ্রুপটি স্বীকার করেছিল যে, তাদের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লাহ ওমরের মৃত্যুর খবর দুই বছর পর্যন্ত গোপন করে রেখেছিল তারা। সেই সময় দলটি তার নামে অব্যাহতভাবে বিবৃতি প্রচার করে গেছে।
কখনোই জনসমক্ষে না আসা তালেবানের বর্তমান সুপ্রিম লিডার হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে নিয়েও নানারকম জল্পনা রয়েছে। বর্তমানে তালেবানের রাজনৈতিক, সামরিক ও ধর্মীয় সকল বিষয়ের প্রধান এই আখুন্দজাদা। আর মোল্লা বারাদার তার কাছের লোক।