বিপিএল হাউজিংয়ের ফ্ল্যাটের চুক্তিপত্র, বিভিন্ন দলিল, মানি রিসিপ্টসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির মামলায় কোম্পানিটির সাবেক কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরার অন্তবর্তী জামিন বাতিল করেছেন আদালত। সোমবার (২০ মে) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মো. রেজাউল করিম এ আদেশ দেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
মামলার বিরবরণীতে জানা যায়, শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা বিপিএল হাউজিং লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর অর্থআত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া কোটি কোটি টাকা ব্যয়, কোম্পানির টাকা নিজ ব্যবসায় লগ্নিসহ গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ ও তাদের অসংখ্য অভিযোগের কারনে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই সঙ্গে কোম্পানির দলিলপত্র প্রয়োজনীয় ফাইল, মোবাইল সেট ও হিসেব পত্র বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু লস্কর ধীরা দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে কোম্পানির বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে ও নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। শাহবুদ্দিন লস্কর ধীরা কোম্পানির অর্থ ফেরত না দিয়ে তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য কোম্পানির বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং সিআর ১১৫৮/২৩ (আদাবর) যা আদালত খারিজ করে দেন।
লস্কর ধীরা দায়িত্বকালিন অনিয়ম ও অর্থআত্মসাতের তদন্ত করার জন্য কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ধীরার মেয়াদকালের (১/২/২০২২ থেকে ৩০/১২/২০২৩) অডিট কার্য সম্পন্ন করা হয়। কোম্পানির অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও এক্রিডিয়েটেড অডিট ফার্মের অডিট রিপোর্টের মাধ্যমে ৪,২৪,১৩,১৫১ টাকা (চার কোটি চব্বিশ লক্ষ তেরো হাজার একশো একান্ন) অর্থ আত্মসাতের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়। এছাড়াও নানা প্রতারনা ও হিসেবের গরমিল দেখিয়ে আরো বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। তার অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়, যার নং ৮ তাং ১৩/৫/২০২৪।
এদিকে, শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা কোম্পানির নির্দেশ অমান্য করে ফাইল পত্র বুঝিয়ে না দিয়ে কোম্পানির ৬৮টি মূল দলিল চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়া বর্তমানে অফিস কাজে ব্যবহৃত (ক্রয়কৃত) ফ্ল্যাটের (জিয়ো শৈলী গার্ডেন ২য় তলা ১৪/৬ লেক সার্কাস কলাবাগান ঢাকা-১২০৫ ) ক্রয় চুক্তির মূল কপি, ফ্ল্যাটের টাকা পরিশোধের মানি রিসিপ্টের সকল মূল কপি সহ প্রয়োজনীয় ফাইল পত্র অফিস থেকে চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়া ৪৮টি চেকের মাধ্যমে ১,৩২,৭৪,০০০ (এক কোটি বত্রিশ লক্ষ চুয়াত্তর হাজার) টাকা রিসিভ করে ফ্ল্যাটটি রেজিস্ট্রি করে না দিয়ে প্রতারনা করে চলছে। এই বিষয়ে কলাবাগান থানায় আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ৫ তাং ৭/৩/২০২৪ ধারা ৩৮১/৫০৬/৩৪ দঃবিঃ। এই মামলায় গত সপ্তাহে অন্তবর্তী জামিন পেয়েছিলেন তিনি। যার মেয়াদ ছিল সোমবার পর্যন্ত। এরপর আদালতে হাজির হলে তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান আদালত। মামলার আরেক আসামি মো. রেজাউল কবিরকে ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন দেয়া হয়।
শাহাবুদ্দিন লস্করসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিপিএল এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান বায়োফার্মার (প্ল্যান্ট) উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল আমিন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে মামলার আবেদন করলে, মহানগর হাকিম আতাউল্লাহ ঢাকার কলাবাগান থানাকে অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। অপর আসামি জিয়ো প্রপার্টিজের কর্মচারী রেজাউল কবিরও চুরির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন বলে মামলার এজাহারে দাবি করা হয়।
উল্লেখ্য, শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা খুলনার সাংবাদিক বেলাল হত্যার চার্জশিটভুক্ত আসামি ও খুলনার অসংখ্য হত্যা মামলার আসামি। বিভিন্ন দৈনিকে তার এই অপরাধের চিত্র প্রকাশিত হয়। এছাড়া ডিএমপির বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে ১৪টির অধিক জিডি করা হয়েছে।
সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দীন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতা হিসেবে শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরাকে অভিযোগ করেছেন নিহত সাংবাদিক বেলালের পরিবার। শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরার আন্ডার গ্রাউন্ড পার্টির সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল বলেও অভিযোগ করেন নিহত বেলালের পরিবার। সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিন, শাহাবুদ্দিন লস্করের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করতে গেলে ধীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরা কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নিয়ে সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিনকে চিরতরে সরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন পরিবার।
বেলাল হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত দুটি মামলাতেই আসামি ছিলেন। আদালত তাকে একটি মামলায় খালাস দিলেও নিহত সাংবাদিক বেলাল হত্যা ঘটনায় শাহাবুদ্দিন লস্কর ধীরার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা চলমান রয়েছে।