বগুড়ার শেরপুরে জমির জাল দলিল তৈরি ও মারধরের মামলায় আকরাম হোসাইন রানা (৪৮) ও তার ভাই গোলাম মোস্তফা মুকুল (৫৫) কে গ্রেফতার করেছেন পুলিশ। অপর ভাই ফিরোজ হোসেন বকুল (৫০) একই মামলার আসামী। তবে সে পূর্বেই গ্রেফতার হয়েছে রাজনৈতিক মামলায়।
গ্রেফতারকৃতরা উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের পাঁচদেউলি গ্রামের মৃত আবির হোসেনের ছেলে ও তাঁরা সবাই স্থানীয় আওয়ামীলীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এরমধ্যে আকরাম হোসাইন রানা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক।
এর আগে একই গ্রামের মৃত গয়েস উদ্দিনের ছেলে মোতাহার আলী, রানা বকুল মুকুল ও তাদের দুই বোন বিউটি খাতুন এবং আঞ্জুআরা খাতুনের বিরুদ্ধে জমির জাল দলিল তৈরী এবং তাঁর ক্রয়কৃত জমি বেদখল দিতে তাঁকে মারধর করে গুরুতর জখম করার অভিযোগে শেরপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলা সুত্রে জানা যায়, মৃত অমূল্য চন্দ্রের দুই ছেলে অতুল প্রসাদ ও অমৃত এর পৈত্রিকসুত্রে পাওয়া ৫৯৫ নং দাগের ৪০ শতাংশ জমি ক্রয়সুত্রে মোতাহার আলী ভোগ দখল করছে। যার কবলা দলিল নং ৫৪৯২ ও ৫৪৯৩।
কিন্তু গ্রেফতারকৃতরা সতীশ চন্দ্র, বিমল চন্দ্র এবং অমল চন্দ্রকে দাতা ও মোছাঃ লুৎফা খাতুনকে গ্রহীতা দেখিয়ে ১৯৭২ সালের একটি জাল দলিল দেখিয়ে ওই জমি জবরদখল করার চেষ্টা এবং মোতাহার আলীকে প্রাণনাশের হুমকিসহ বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। অথচ ভূয়া ওই দলিলের কোনো রেজিস্ট্রি বা ভলিউম খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় মোতাহার আলী শেরপুর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী দৈনিক প্রথম সময়কে জানান, আসামীরা ১৯৭২ সালের একটি জাল দলিল তৈরী করে সুযোগের অপেক্ষায় দলিলটি গোপন করে রেখেছিল।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মজিবর রহমান মজনু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ভূয়া ওই দলিলটি প্রকাশ্যে নিয়ে আসে এবং তার ক্রয়কৃত জমি বেদখল দিতে প্রাণনাশের হুমকিসহ না-না রকম পাঁয়তারা করতে থাকে।
কারণ তারা ছিল আওয়ামী সংসদ সদস্য মজিবর রহমান মজনুর আশির্বাদপৃষ্ঠ। আওয়ামী সরকারের আমলে তাদের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ নেওয়া হতোনা।
এই সুযোগ কাজ লাগিয়ে ওই ভূয়া দলিলটির বলে তারা তাকে মারধর করে কৃয়কৃত জমিটি জবরদখল করার ছেষ্টা চালায়।
মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদনে দলিলটি জাল প্রমাণিত করলে আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
এরপর গত ৯ ডিসেম্বর তারা আগাম জামিনের জন্য আদালতে উপস্থিত হলে, আদালত সেটা না মঞ্জুর করে গ্রেফতারপূর্বক জেল তাদের হাজতে প্রেরণ করেন।
এদিকে স্থানীয় বেশকিছু এলাকাবাসী তাদের ভূমিদস্যু আখ্যায়িত করে জানান, অন্যের ভূমি জবরদখল করা তাদের রক্তে মিশে গেছে, তারা যত জমি ভোগ দখল করছে তার প্রায় অর্ধেক স্থানীয় সংখ্যালঘুদের জমি বিভিন্ন ভাবে জবর দখল করা।
রাসেল নামে একজন জানান, অভিযুক্তরা আমার বৈমাত্রেয় বড়ভাই। আমি তাদের বিষয়ে আর কি বলবো।
শুধু এটুকুই বলবো বাবার মৃত্যুর পর আমার প্রাপ্য হক থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছে। এমনকি আমার ক্রয় করা জমির ধান জোরপূর্বক তারা কেটে নিয়েছে। এছাড়াও আপন চাচার বাড়ি তারা জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। মহান আল্লাহ পাক তাদের হেদায়েত করুন।