ব্রেক্সিট বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের। অনেক বাগ্বিত-ার মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রেক্সিট হলেও বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এখনো সুরাহায় পৌঁছাতে পারেনি জনসন সরকার। একের পর এক নতুন প্যাচের মধ্যে পড়ছে যুক্তরাজ্য। সম্প্রতি জনসন এক বক্তব্যে বলেছেন, যেভাবেই হোক ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তির অধীনেই আইরিশ সাগরে অবরোধ দিতে হবে।
জনসনের আইরিশ সাগরে অবরোধ দেওয়ার ইচ্ছা যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে হুমকি দেওয়া তা স্পষ্টতই বলা যায়। জনসন বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমাদের টুকরো টুকরো করে দিতে পারে, আমাদের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে। কনজারভেটিভ পার্টির বিদ্রোহী এমপিরা যদি অভ্যন্তরীণ বাজার বিল আটকে দেয় তাহলে ইউরোপ সফল হবে।’
পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্যদের হাত করে জনসন বাজার বিল পাস করাতে চাইছেন। যদিও জ্যেষ্ঠরা মনে করছেন, এই বিল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করতে পারে। কারণ এই বিলটি পাস হলে তা ইউরোপের সঙ্গে গত বছর করা চুক্তির বিরোধী হবে। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও বসে নেই। তারা বলছে, জনসনের এমন পদক্ষেপ যুক্তরাজ্যকে বিপদে ফেলতে পারে। চলতি মাসের শেষের মধ্যে যুক্তরাজ্য এই বাজার বিলের বিরুদ্ধে যদি আইনি পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। আর এমনটা হলে ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্য ঘোরতর বিপদে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি দ্য টেলিগ্রাফে এক কলামে জনসন বলেন, ‘আমাদেরকে এখন শোনানো হচ্ছে আমরা যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্ত মেনে না নেই তাহলে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড প্রটোকল অনুসারে আমাদের সীমান্ত বাণিজ্যের ওপর অবরোধ জারি করা হবে। আমাদের বলা হয়েছিল ইউরোপ গ্রেট ব্রিটেন ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার স্থানান্তর হওয়া পণ্যের ওপর কোনো শুল্ক ধার্য করা হবে না। কিন্তু ইউরোপের শুল্ক ধার্যের ফলে গ্রেট ব্রিটেন ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের মধ্যে খাবার পরিবহনও বন্ধ হয়ে গেছে।’

আয়ারল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই জনসনকে তার বাজার পরিকল্পনা নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। বিলটি পাস হলে গুড ফ্রাইডে চুক্তি রক্ষা করা যাবে না এবং শান্তি বিঘিœত হবে এমন কথাও বলেছে তারা। কিন্তু কোনো কিছুই মানতে বা শুনতে নারাজ জনসন। কারণ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তার টিকে থাকতে হলে কনজারভেটিভ সমর্থক ব্যবসায়ীদের পক্ষে এই বিল পাস করাতে হবে তাকে। গত শুক্রবার তাই এক বৈঠকে আড়াইশ এমপিকে বিল পাসের পক্ষে মত দেওয়ার জন্য বোঝাতে দেখা যায় জনসনকে। কিন্তু এমপিদের মধ্যে অনেকেই জনসনের বক্তব্যে আশার আলো দেখতে পারছেন না। জ্যেষ্ঠ এমপি স্যার বব নেইলের মতো প্রভাবশালীরাও জনসনের বক্তব্যে যুক্তরাজ্যের স্বার্থ রক্ষিত হয় এমন কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। ফলে জনসন নিজ পার্টিতে যেমন চ্যালেঞ্জের মুখে তেমনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের তোপের মুখে আছেন।
নেইলের মতো জ্যেষ্ঠ এমপিরা বিলটিকে সংসদে আটকে দিয়ে পদক্ষেপ নেবেন এমনটা বলছে দ্য গার্ডিয়ান। তবে এখানেও বিপদ আছে। তারা বিলটি আটকাতে যদি বিচ্ছেদ চুক্তিতে কোনো পরিবর্তন আনতে চান, তাহলে ব্রেক্সিট প্রশ্নে আবার গোড়া থেকে আলোচনা শুরু করতে হবে উভয়পক্ষকে। আর এমনটা হলে যুক্তরাজ্যকে আপস করতে হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে।