সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো এখন বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের যাত্রা শুরু গ্রামীণফোনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘বায়োস্কোপ’-এর হাত ধরে। যাত্রার শুরুতেই দর্শকের মধ্যে সাড়া ফেলে প্ল্যাটফর্মটি। এখন বিদেশি প্ল্যাটফর্মের পাশাপাশি দেশি আরও বেশকিছু প্ল্যাটফর্ম এসেছে। বাংলালিংক এনেছে টফি, আর রবি এনেছে ‘বিঞ্জ’। তাই প্রতিযোগিতাও বেশি। এজন্য আবারও নতুন উদ্যমে কাজ করছে বায়োস্কোপ। করোনাকালে তারা কোনো অরিজিনাল প্রযোজনা আনতে পারেনি। তবে লকডাউন শিথিল হলে নতুন অরিজিনালস তৈরিতে হাত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরইমধ্যে তৈরি হয়েছে ‘সুন্দরী’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ। এটিকে তারা বলছে দেশের প্রথম হরর ওয়েব সিরিজ। সিদ্দিক আহমেদ পরিচালিত এ ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন নাজিয়া হক অর্ষা, অপর্ণা ঘোষ, দোয়েল ম্যাশ, আইরিন আফরোজ, এফএস নাঈম ও ইমরান নূর। বায়োস্কোপের মার্কেটিং ম্যানেজার ফারদিন আমিন জানান, নভেম্বরের শেষের দিকে এই ওয়েব সিরিজটি মুক্তি পাবে।
কী উদ্দেশ্য নিয়ে বায়োস্কোপের যাত্রা শুরু জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব ডিজিটাল কনটেন্ট বিজনেস ইফতেখার ইবনে জামান বলেন, ‘এখন বিনোদন দুনিয়া অনেকটাই অনলাইন নির্ভর। বিশেষত, বিগত কয়েক বছর আমাদের দেশের দর্শকও নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম বা ভারতের হৈচৈ কিংবা জি ফাইভে নিয়মিত সময় কাটাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিদেশি প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে আমাদের দেশের শিল্প-সংস্কৃতির কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। এর ফলে দর্শক ধীরে ধীরে বিদেশি কনটেন্টের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। আমাদের দেশের শিল্প, সংস্কৃতির বহু বছরের ঐতিহ্য রয়েছে। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে আমাদের কাজগুলো বিশে^র দরবারে তুলে ধরার এখনই সময়। আমাদের প্ল্যাটফর্মে অতি অল্প খরচে দর্শক নিজ দেশের কাজ দেখতে পারবেন। যা আমাদের শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
আগামী কয়েক বছরে বায়োস্কোপ কোথায় পৌঁছতে চায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে দেশের মানুষের মন জয় করতে চাই। এজন্য আমরা প্রতিটি কনটেন্টের মান নিয়ে কোনো আপস করছি না। এখন আমাদের কনটেন্ট শুধু বাংলাদেশের মানুষই দেখতে পারছে। কারণ আমাদের সার্ভিস চার্জ বাংলাদেশি মুদ্রায় নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে আমরা ইন্টারন্যাশনালি কাজ করতে চাই।’
ইন্টারন্যাশনাল ও দেশি অন্যান্য ওয়েব প্ল্যাটফর্মের মধ্যে টিকে থাকার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন তা জানালেন বায়োস্কোপের মার্কেটিং ম্যানেজার ফারদিন আমিন বলেন, ‘বায়োস্কোপের সেøাগানই হলো যখন তখন বিনোদন। অর্থাৎ দর্শক যে কোনো জায়গা থেকে প্রয়োজনীয় বিনোদন পেতে পারেন। আমরা মূলত তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছি। প্রথম লাইভ টিভি। আমরাই প্রথম দেশ ও বিদেশের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলগুলো লিগ্যালি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছি। এজন্য বায়োস্কোপের অনেক বড় অংশের দর্শক লাইভ টিভি দেখেন। দেশি খবরের চ্যানেল ও বিদেশি স্পোর্টস চ্যানেলগুলো খুব জনপ্রিয়। দেশি চ্যানেলগুলো ফ্রি দেখতে পারেন। বিদেশি চ্যানেল দেখতে গেলে ফি দিতে হয়। দ্বিতীয়ত, অরিজিনাল কনটেন্ট। ওয়েব সিরিজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রেভ্যুলুশন তৈরি করেছে বায়োস্কোপ। আমরা এ পর্যন্ত ৩০টির মতো অরিজিনাল ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করেছি। যাতে দেশের বিখ্যাত তারকারা কাজ করেছেন। প্রতিনিয়ত দেশের বড় বড় নির্মাতা, লেখক ও তারকাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি যাতে তাদের মাথায় নতুন কোনো আইডিয়া এলে যেন প্রথমেই আমাদের সঙ্গে শেয়ার করে। আমরা সেটা থেকে প্রডাকশন তৈরি করতে পারি। তৃতীয়ত, আমরা ভিডিও অন ডিমান্ড বলে একটা পদ্ধতি ফলো করি। অর্থাৎ যে সব নাটক, সিনেমা, ভিডিওর প্রতি দর্শকের আগ্রহ ব্যাপক সেগুলো বায়োস্কোপে রাখছি। যেমন দেবী, শিকারী সিনেমাগুলো রিসেন্টলি বিগ হিট। সেগুলো আমাদের অ্যাপে আছে। এছাড়া সম্প্রতি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সঙ্গে চুক্তি করেছি। তাদের সব বিখ্যাত নাটক, সিনেমা এরইমধ্যে বায়োস্কোপে যুক্ত করা হয়েছে। সামনেও আমরা দর্শক ধরে রাখতে নানা ধরনের চমক নিয়ে হাজির হব।’