কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র দুই সপ্তাহ। অথচ ঈদে কোন কোন ছবি মুক্তি পাবে তা নিয়ে এখনো কোনো সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না হল মালিকরা। রোজার ঈদের পরপরই শোনা গিয়েছিল ঈদে শাকিব খান অভিনীত দুই ছবি ‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’ ও ‘অন্তরাত্মা’, অনন্ত জলিল অভিনীত ‘দিন-দ্য ডে’ ও সিয়াম আহমেদ অভিনীত ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এর মতো বড় বাজেটের চারটি ছবি মুক্তি পাবে। প্রতিটি ছবিই তারকাবহুল হওয়ায় আশান্বিত হয়েছিলেন হল মালিকরা। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ছবি নিয়ে দেনদরবারও করেছিলেন তারা। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, চারটি ছবির তিনটির মুক্তিই অনিশ্চিত। ‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’ ছবির পোস্ট প্রডাকশনের কাজ করতে ভারতে গিয়েছিলেন পরিচালক তপু খান। যদিও ছবির গানের শ্যুটিং এখনো বাকি। ছবিটির প্রযোজক বেঙ্গল মাল্টিমিডিয়া। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান বলেন, ‘ছবির দুটি গানের শ্যুটিং এখনো বাকি। শাকিব খান এখন দেশের বাইরে আছেন, তিনি এলে শ্যুটিং করবেন। তবে পর্যাপ্ত সময় না পেলে তড়িঘড়ি করে শ্যুটিং করতে চাই না। অসম্পূর্ণ ছবিটি মুক্তি দিয়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সুনামও নষ্ট করতে চাই না।’ জানা গেছে, এবার ঈদেও শাকিব খানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা নেই।
মুক্তির মিছিলে সবার আগে যোগ দেওয়া ‘অন্তরাত্মা’ ছবির পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রযোজককে সম্পূর্ণ ছবিটি বুঝিয়ে দিয়েছি। এখন মুক্তি দেওয়ার দায়-দায়িত্ব তার। এ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। প্রযোজকই সব সিদ্ধান্ত নেবেন।’
‘অপারেশন সুন্দরবন’ মুক্তির ঘোষণা দিয়ে হল বুকিংও শুরু করেছিল। সম্প্রতি প্রযোজক ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন, ছবিটি ঈদে মুক্তি দেবেন না। ছবি মুক্তির বিষয়ে প্রযোজক-পরিচালকরা বারবার সিদ্ধান্ত বদল করায় দ্বিধায় আছেন হল মালিকরা। দেশের ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল যশোরের ‘মণিহার’-এর বুকিং এজেন্ট ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘হার্টবিট প্রডাকশন’-এর কার্যনির্বাহী প্রযোজক আলী আকবর সোহাগ বলেন, “আমার ক্যারিয়ারে আগে কখনো এমন অবস্থা দেখিনি। ছবি মুক্তি দেওয়া নিয়ে প্রযোজক-পরিচালকরা কেন লুকোচুরি করছেন, সেটা বুঝতেই পারছি না। ২০১৮ সালে ঈদের এক মাস আগেই আমাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ছবি ‘সুপার হিরো’র মুক্তির ঘোষণা দিয়েছিলাম, অথচ তখনো শ্যুটিং চলছিল ছবিটির। হল মালিকরা তবু বুকিং নিয়েছেন। ঈদের মাত্র এক দিন আগে আমরা সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছিলাম, তবু কেউ হল বুকিং বাতিল করেননি। আমাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন তারা। ছবিটি তখন ৮০টির বেশি হলে মুক্তি দিয়েছিলাম। আর এখন হল বুকিং তো দূরের কথা, হল মালিকরা জানেনই না কোন ছবি শেষ পর্যন্ত ঈদে আসবে!”
এদিকে ঈদে মুক্তি পাওয়ার কথা না থাকলেও গত সপ্তাহে হঠাৎ শাহিন সুমন ও রায়হান রাফি তাদের ‘গ্যাংস্টার’ ও ‘পরাণ’ ছবি দুটি মুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। শাহীন বলেন, ‘মুক্তির দৌড়ে থাকা তিনটি ছবি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বলেই আমরা এগিয়ে এসেছি। ঈদে অন্তত একটা বড় ছবি লাগে। আমার ছবিটি বড় বাজেটের। সাইমন সাদিক, মাহিয়া মাহি, শান্ত খান, রূপসা মুখার্জিসহ অনেক তারকা রয়েছেন।’
রায়হান রাফি বলেন, ‘আমি হল মালিকদের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা বলছি। তারা আমার ছবির ট্রেলার দেখেছেন, পছন্দও করেছেন। ছবিটি ঈদে মুক্তি পাবে এটা নিশ্চিত।’
এ সপ্তাহে ঈদে মুক্তির ঘোষণা দেওয়া দুই নতুন ছবি হলো পরিচালক অনন্য মামুনের ‘সাইকো’ ও সৈকত নাসিরের ‘বর্ডার’। অনন্য মামুন বলেন, ‘আমার ছবিটি অনেক দিন ধরেই মুক্তির জন্য প্রস্তুত। ভালো সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। এবার ঈদে আমার কাছে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার মোক্ষম সময় মনে হয়েছে। শিগগিরই প্রচার-প্রচারণাও শুরু করব।’
এদিকে ছবি মুক্তি নিয়ে বেশ ঘোলাজলে পড়েছেন হল মালিক ও বুকিং এজেন্টরা। বুকিং এজেন্ট সমিতির সভাপতি ও প্রযোজক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ঈদের বাকি আর ১৯-২০ দিন। অথচ নেই কোনো পোস্টার, নেই কোনো প্রচারণা। হল মালিকরা কীসের আশায় হল চালু রাখবেন? আমার নিজের অধীনে এখন ১০টির অধিক হল আছে। আমি কি তীর্থের কাকের মতো বসে থাকব প্রযোজক কখন ছবি মুক্তি দেবেন সেটা ভেবে?’
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, “ঈদে তারকাবহুল বড় বাজেটের ছবি লাগে। শাকিব খান বা সিয়ামের কোনো ছবি এবার ঈদে মুক্তি না পেলে ফল খুব খারাপ হবে। শুধু অনন্তর ‘দিন-দ্য ডে’ নিয়ে ভালো কিছু আশা করাটা কঠিন। এই ‘বর্ডার’, ‘সাইকো’ কিংবা ‘গ্যাংস্টার’-এর মতো ছবির তারকাদের দিয়ে ভালো সেল পাওয়া কঠিন হবে। শুধু তাই নয়, রোজার ঈদে যেটুকু পজিটিভ ফলাফল এসেছিল, সেটাও এই ঈদে নষ্ট হবে।”