তবে সোমবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরেও নতুন দামে তেল পাওয়া যায়নি। সব দোকানেই আগের মতোই প্রতিলিটারের বোতল ২০৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খোলা সয়াবিন তেলের কেজি ২০০ টাকা আর ৫ লিটারের বোতল ৯৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
দাম কমলেও ২০৫ টাকা লিটার সয়াবিন তেলের বোতল বিক্রির বিষয়ে কারওয়ান বাজারের হাজী মিজান এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী মো. মিজান বলেন, দাম কমলেও তেলের নতুন চালান এখনও আসেনি। তাই আগের কেনা দামেই বিক্রি করছি। কম দামের তেল পেলে কম দামেই বিক্রি করবেন বলে তিনি জানান।
একই কথা বলেন মিরপুরের পীরেরবাগের আল আমিন স্টোরের ব্যবসায়ী মো. আল আমিন। তিনি বলেন, এখন ২০৫ টাকা দরেই বিক্রি করছি। ১৯৮ টাকার তেল তিন-চার দিন আগেও বিক্রি করেছি। নতুন তেল না আসা পর্যন্ত ২০৫ টাকাতেই বিক্রি করতে হবে।
কারওয়ান বাজারে সয়াবিন তেল কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী আবুল কালাম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সরকার ঘোষণা দেওয়ার পরও এখনও দাম কমেনি। কোনো দোকানেই ১৯৯ টাকায় তেল খুঁজে পেলাম না। বাধ্য হয়েই ২০৫ টাকা লিটার কিনতে হলো।
কবে নাগাদ নতুন তেল বাজারে আসবে জানতে চাইলে টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আতহার তাসলিম সময়ের আলোকে বলেন, আমরা আজ (সোমবার) থেকেই নতুন দামের তেল ছেড়ে দিয়েছি। সেগুলো হয়তো বাজারে পৌঁছতে দুয়েকদিন সময় লাগবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে ২৬ শতাংশ দাম কমলেও আড়াই শতাংশ দাম কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও সেটা এখনও আমরা কিনিনি। আগের কেনাটাই আসছে। তেল কেনার পর প্রায় দুই মাস সময় লাগে দেশে পৌঁছতে। সেই তেল এলে দেশেও দাম কমবে। আমরা যে তেল আমদানি করি সেই তথ্য কাস্টমসের কাছে আছে। আমরা কী দামে তেল কিনছি সেটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানে। সে অনুযায়ীই নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে রোববার বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষও একই কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, তেলটা আমাদের আসে প্যারাগুয়ে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে। সেখান থেকে তেল আসতে কমপক্ষে ৪৫ থেকে ৬০ দিন লেগে যায়। এখানে যে সময়ের গ্যাপ রয়েছে তাই চাইলেও দেশের বাজারে তাৎক্ষণিক দাম কমানো যায় না। এ সময়ের গ্যাপটা চিন্তা করতে হয়। তবে সুখবর হলো, ইন্দোনেশিয়া থেকে এখন কিছু তেল আসে, সেখান থেকেও আসতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে আবার ডলারের দামও বেড়েছে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। এই দুটি বিষয় সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সময়ের আলোকে বলেন, সয়াবিন তেলের আরও মূল্য হ্রাসের সুযোগ রয়েছে। আমরা মনে করি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক্ষেত্রে আমদানিকারকদের সঙ্গে বসবে। খুচরা ও পাইকারি পর্যায়েও কথা বলবেন এবং সেই ভিত্তিতে মূল্য ইতোমধ্যেই কিছুটা পুনর্নির্ধারণ হয়েছে। কিন্তু এক ধরনের যৌক্তিক পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মহাসচিব হুমায়ুন কবীর সময়ের আলোকে বলেন, বাজারে তেলের দাম কমেনি। আমরা আজ (গতকাল) বাজার থেকে যত তথ্য পেয়েছি, কোনো একটি তথ্যও আমাদেরকে বলেনি যে দাম কমেছে। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে অনেক। সেদিক থেকে দেশের বাজারে দাম কমেনি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। আমরা ব্যবসায়ী এবং সরকারকে বলেছি, তেলের দাম নিয়ে তেলেসমাতি চলছে। এ অসাধু খেলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
সর্বশেষ গত ৯ জুন সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। ওই সময় প্রতিলিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী হওয়ার পর দেশেও কমানো হলো দাম। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যতটা কমেছে, সে তুলনায় দেশে দাম কমেছে অনেকটাই কম। তেলের দাম লিটারে কমেছে ৩ শতাংশেরও কম। কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম ২৬ শতাংশের মতো কমেছে বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
গত ৯ জুন বাজেট ঘোষণার দিন সবশেষ তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সেদিন লিটারে ৭ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত তেলের দাম ঠিক করা হয় ২০৫ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ঠিক করা হয় ১৮৫ টাকা। এক বছর আগেও বোতলজাত তেলের লিটার ছিল ১৩৪ টাকা করে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি তা নির্ধারণ করা হয় ১৬৮ টাকা। এরপর ৫ মে তেলের দাম লিটারে একলাফে ৩৮ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ১৯৮ টাকা।