রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট-বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার চাপায় পাঁচজন নিহতের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা বেষ্টনী নিয়ে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ তাৎক্ষণিক মন্তব্যে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল বলে দাবি করছেন। কয়েকজন বিশেষজ্ঞসহ প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না।
সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে তারা দুর্ঘটনার শিকার হন।
নিহতরা হলেন, মো. রুবেল মিয়া (৬০), মোছা. ফাহিমা (৩৭), মোছা. ঝরনা (২৬), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাতুল (৬) ও মো. জাকারিয়া (৪)। শুধু প্রাণে বেঁচে গেছেন হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১) নামের নবদম্পতি। তারা আহত অবস্থায় উত্তরা আধুনিক মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
নিহতদের স্বজনেরা জানিয়েছেন, বিমানবন্দর কাউলা এলাকায় নবদম্পতি হৃদয় ও রিয়ার বউভাতের অনুষ্ঠান শেষ করে স্বজনেরা মিলে ওই প্রাইভেট কারে করে আশুলিয়ার বাসায় ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পরেন তারা। নিহতদের সকলের গ্রামের বাড়ি জামালপুরের ইসলাম পুরে।
এ ঘটনায় পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার সময় ওই সড়কে যানবাহনের ভিড় ছিল। নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কাছ দিয়ে চলছিল ছোট ছোট গাড়ি। এ সময়ে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির ওপর গার্ডার এসে পড়ে।
প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা স্থলে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছে, এ প্রকল্পের আশপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেখা যায়নি। মূল সড়কের ওপরে রাখা হয় নির্মাণ সামগ্রী।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মগবাজার থেকে উত্তরা পর্যন্ত প্রায়ই যাতায়াত করা হয়। বিমানবন্দর পার হলেই এক ধরনের ভয় কাজ করে। যেভাবে বিআরটি প্রকল্পের নানা জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে, তাতে যেকোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। এ জায়গাটা পার হওয়ার পর স্বস্তি আসে। কিন্তু আজ (সোমবার) যেভাবে ছোট ক্রেন থেকে ছিটকে গার্ডার পরে যে দুর্ঘটনা ঘটল, তার পুরো দায় বিআরটিকেই নিতে হবে। তাদের গাফিলতির জন্য এ অবস্থা হলো’।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এই সমস্ত কাজের সময় খুব বেশি সতর্ক থাকতে হয়। কারণ, যে কোনো সময় দুর্ঘটনা হতেই পারে। সে জন্য নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু সেখানে সেভাবে তো নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না। আর একটা ছোট ক্রেন দিয়ে এত বড় গার্ডার বহন করার জন্যই কাত হয়ে গেছে ক্রেনটি। যার জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে’।
ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিডেট (বিআরটি) প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনার জন্যসহ নানা কিছু জটিলতার কারণে এই প্রকল্প কাজ শেষ হতে অনেক সময় লেগে যায়। সে জন্য এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দিনে-রাতেই এখন কাজ করা হচ্ছে। ৮০ শতাংশের বেশি হবে কাজ শেষ হয়েছে।’
নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল দাবি করে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের গার্ডারটি ক্রেনে করে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেয়ার সময় নিরাপত্তার বেষ্টনীর বাইরে কাত হয়ে চলে যায়। মেকানিক্যাল সমস্যার জন্য কাত হয়ে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে একটু দূরে পরে যাওয়ায় এই দুর্ঘটনা হয়েছে’।
সোমবার সন্ধ্যায় সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিনুল্লাহ নূরী ঘটনাস্থলে পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, গার্ডার উত্তোলন করার সময় নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কি না, তা ছাড়া যে ক্রেন দিয়ে গার্ডার উত্তোলন করা হয়েছে, সেটির সক্ষমতা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ দুর্ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বিআরটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, যে জায়গায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেই আমরা কাজ করে থাকি। এটা নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে গিয়ে পড়েছে। এই দুর্ঘটনা ক্রেনের অপারেটরের কারণে হয়েছে, না কি ক্রেনের ত্রুটির কারণে হয়েছে, তা তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে।
এ ঘটনায় বিআরটি প্রকল্পের কাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
তিনি বলেন, এ ধরনের কাজ করার সময় অবশ্যই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখার কথা। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজটি কেন করল, তা খতিয়ে দেখা হবে।