গাজীপুরের উলুখোলা এলাকায় ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমিতে শহীদ মিনার স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন করা হয়েছে। এ শহীদ মিনার উদ্ধোধন করেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
এ উপলক্ষে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকী, প্রতিষ্ঠানের কমান্ড্যান্ট ক্যাপ্টেন জাকি আহাদ বক্তব্য রাখেন। এসময় নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খালেদা আক্তারসহ একাডেমির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ক্যাডেট ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রতিমন্ত্রী একাডেমি প্রাঙ্গনে পৌঁছলে একাডেমির শিক্ষার্থীরা তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এরপর তিনি একাডেমি প্রাঙ্গনে একটি গাছ রোপন করেন।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মেরিটাইম সেক্টর অপার সম্ভাবনার এক বিরাট ক্ষেত্র। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার অনেকটা আসে মেরিটাইম সেক্টর থেকে। আমাদের মেরিন ক্যাডেট ও রেটিংসরা দেশি বিদেশি জাহাজে চাকুরি করে বিপুলসংখ্যাক বৈদেশিক মুদ্র অর্জন করে থাকেন। ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে অর্থনীতির প্রধান হাতিয়ার হতে পারে মেরিটাইম সেক্টর।
মেরিটাইম সেক্টরকে পুরোপরি কাজে লাগাতে পারলে আমাদের রিজার্ভ দাঁড়াতো দুইশত বিলিয়ন ডলার। কিন্তু সেটি আমরা পারিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেরিটাইম ভিশনকে অনুসরণ করেই আমরা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উন্নয়নে কাজ করে চলেছি। বঙ্গবন্ধুই টেরিটোরিয়াল জোন এবং মেরিটাইম বাউন্ডরি এ্যাক্ট প্রণয়ন করেন। আমরা যা অর্জন করেছি, তা আমাদের মহান নেতার হাত ধরে এসেছ। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে মেরিটাইম সেক্টর অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সবচেয়ে বেশি আঘাত আসে মেরিটাইম সেক্টরে। এ সেক্টর তেমন আগায়নি।
এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, মেরিন ক্যাডেট তৈরির জন্য চট্টগ্রামে আমাদের মাত্র একটি মেরিন একাডেমি ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক নির্দেশনার ফলে রংপুর, পাবনা, সিলেট এবং বরিশালে আরো চারটি নতুন মেরিন একাডেমি নির্মিত হয়েছে। সেখান থেকে অধিক সংখ্যক ক্যাডেট প্রতিবছর আমাদের মেরিন বহরকে সমৃদ্ধ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে যা আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। জাহাজের রেটিং তৈরির জন্য চট্টগ্রামে আমাদের একটি মাত্র মেরিটাইম ইন্সটিটিউট ছিল। ইতিমধ্যে মাদারীপুরে একটি মেরিটাইম ইন্সটিটিউট নির্মাণ করা হয়েছে। কুড়িগ্রামে আরো একটি মেরিটাইম ইন্সটিটিউট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে দেশি-বিদেশি জাহাজে রেটিংদের চাকুরির ক্ষেত্র আরো বৃদ্ধি পাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আরো সহায়ক হবে।
বৈশ্বিক অর্থনীতির চলমান টালমাটাল অবস্থার মধ্যেও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যথেষ্ট শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। কোভিড সময়কাল ও বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে, যা বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অনুযায়ী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে প্রবেশ করবে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ হবে। উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমির কমান্ড্যান্ট, ক্যাপ্টেন জাকি আহাদ তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে সম্মানিত অতিথিগণকে মেরিটাইম শিক্ষা প্রসার ও অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
তিনি আরো বলেন, জাতির উন্নয়নে বেসরকারি সেক্টরের মেরিটাইম প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও অবদানের চিত্র তুলে ধরেন এবং দক্ষ মেরিন জনশক্তি গড়ে তোলায় ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমির প্রসংশা করেন।
বেগম মেহের আফরোজ চুমকি, এমপি তার বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমির অবদানের কথা উল্লেখ করেন। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমি বেসরকারি মেরিটাইম প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রথম প্রতিষ্ঠান, যার প্রথম ব্যাচ পাসিং আউট অনুষ্ঠান উদযাপন করেছিল ১ মার্চ ২০১০। এরপর যথাক্রমে ১১টি ব্যাচে ৬৮৭ জন ক্যাডেট এবং ৭টি রেটিং ব্যাচে মোট ৩০৮ জন রেটিং বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। বর্তমানে প্রিসি ক্যাডেট ১২তম এবং ১৩তম ব্যাচে মোট ১৫৮ জন ক্যাডেট প্রশিক্ষণরত রয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমির প্রশিক্ষণ সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের অনুমোদিত পাঠ্যক্রম এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি অনার্স কোর্স অনুযায়ী হচ্ছে।
প্রশিক্ষার্থীগণ প্রশিক্ষণ শেষে মেসার্স হক এন্ড সন্স ব্যবস্থাপনায় বিখ্যাত বিদেশি কোম্পানিতে যোগদান করবে। তারা তাদের বেতন আন্তর্জাতিক বেতন স্কেলে পেয়ে থাকেন।
অনুষ্ঠান শেষে এমদাদুল হক চৌধুরী, ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম একাডেমির পক্ষ থেকে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।