নর্ড স্ট্রিম ২ নামে পরিচিত রাশিয়ার প্রধান একটি গ্যাস পাইপলাইন বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, মস্কো যদি ইউক্রেনে হামলা চালায় তাহলে ওই পাইপলাইনটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে সোমবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকের পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, উত্তেজনা নিরসনের পট প্রস্তুতে ইউক্রেনের কাছে আপাতত নতুন কোনো সামরিক কর্মকাণ্ড শুরু করবে না ক্রেমলিন।
এদিকে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে অস্ত্র সহায়তা চাওয়া হলেও জার্মানি তা দিতে সম্মত না হওয়ার প্রেক্ষাপটে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বৈঠক বাতিল হয়ে গেছে। এমন উত্তেজনাময় পরিস্থিতির মধ্যেই মহড়া
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ওয়াশিংটনে সফররত জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন নর্ড স্ট্রিম বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন। বহুল আলোচিত ওই পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহের কথা রয়েছে। তবে ১১শ’ কোটি ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই পাইপলাইনটির কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।
সোমবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। বৈঠক শেষে হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন দুই নেতা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জো বাইডেন বলেন, ‘রাশিয়া যদি আক্রমণ চালায়, তাদের ট্যাঙ্ক ও সেনারা ফের ইউক্রেনের সীমান্ত অতিক্রম করে, তাহলে সেখানে আর নর্ড স্ট্রিম ২ থাকবে না। আমরা এটির অবসান ঘটাব। সেই সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।’
ঠিক কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র এই গ্যাস পাইপলাইনের অবসান ঘটাবে বা এটি বন্ধ করে দেবে সে বিষয়ে অবশ্য বিস্তারিত কিছু জানাননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে এর আগে গত মাসের শেষ দিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস জানান, রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালালে জার্মানির সঙ্গে মিলিতভাবে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করবে প্রকল্পটি যেন আর সামনে অগ্রসর না হয়।
বিতর্কিত এই পাইপলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে রাশিয়া থেকে সরাসরি জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহের কথা রয়েছে। ১ হাজার ২২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনটি নির্মাণে সময় লেগেছে পাঁচ বছর। এটি ইউক্রেনের ভেতর দিয়ে গেছে। এই পাইপলাইনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল ইউক্রেন এখন রুশ হামলার আশঙ্কায় রয়েছে।
নতুন সামরিক কর্মকাণ্ড না চালানোর আশ্বাস
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে পুতিনের বৈঠকের পর এক ফরাসি কর্মকর্তা জানান, উত্তেজনা নিরসনের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে ইউক্রেনের কাছে আপাতত নতুন কোনো সামরিক কর্মকাণ্ড শুরু না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। রুশ নেতা ইউক্রেন সীমান্তের কাছে বেলারুশে থাকা রাশিয়ার সেনাদের মহড়ার পরপরই ফেরত নিতেও রাজি হয়েছেন, নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন ফ্রান্সের ওই কর্মকর্তা। সোমবার ক্রেমলিনে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছয় ঘণ্টার বৈঠক শেষে পুতিন গণমাধ্যমে কথা বললেও এসব প্রতিশ্রুতির উল্লেখ করেননি।
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাতেই রাশিয়া লাখখানেক সৈন্য প্রস্তুত রেখেছে বলে আশঙ্কা পশ্চিমা দেশগুলোর। মস্কো প্রথম থেকেই ইউক্রেনে তাদের হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে; যদিও তারা বলছে, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার নিরাপত্তা সংক্রান্ত দাবি না মানলে মস্কো সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে সে পদক্ষেপ কেমন হতে পারে, তার কোনো ধারণা দেয়নি তারা। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে ম্যাক্রোঁ ‘কৌশলগত প্রশ্নে খোলামেলা আলোচনায়’ রাজি হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন ওই ফরাসি কর্মকর্তা। তবে সেই আলোচনায় কোন কোন বিষয় থাকতে পারে, সে সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বৈঠক বাতিল রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে অস্ত্র চেয়েছে ইউক্রেন। কিন্তু জার্মানি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে দেশটির হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে না। শুধু তাই নয়, ইউক্রেনে সেনা পাঠাতেও রাজি নয় জার্মানি। কিয়েভের অভিযোগ, বার্লিন নিজেও অস্ত্র দিচ্ছে না, অন্য দেশকেও দিতে দিচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে ফের ইউক্রেন গেলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। বোঝানোর চেষ্টা করলেন, অস্ত্র বিক্রি না করলেও তারা ইউক্রেনের পাশে আছে। জানুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেন গিয়েছিলেন বেয়ারবক। পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় ফের দেশটিতে গেলেন তিনি। সোমবার তার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবার। এরপর দেশটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা ছিল; কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেটি বাতিল হয়েছে।
ইউক্রেন সরকারিভাবে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় বৈঠক বাতিল হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জার্মানি অস্ত্র বিক্রি করতে না চাওয়ার কারণেই বৈঠক বাতিল হয়েছে। তবে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেয়ারবকের বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে কিয়েভ।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মহড়া
ভূমধ্যসাগর থেকে মঙ্গলবার কৃষ্ণসাগর অভিমুখে যাত্রা করেছে রাশিয়ার ছয় যুদ্ধজাহাজ। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ইন্টারফ্যাক্স। আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়ার একটি নৌ মহড়ায় অংশ নিতে যুদ্ধজাহাজগুলোকে কৃষ্ণসাগরে পাঠিয়েছে মস্কো।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে গত মাসেই প্রশান্ত মহাসাগর থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পর্যন্ত বড় ধরনের একটি নৌ মহড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এতে রাশিয়ার সব নৌবহরকে যুক্ত করার কথাও জানায় মস্কো
এদিকে আগামী ১০ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ড্রোন ও ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে সামরিক মহড়া চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইউক্রেন। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের কাছে এ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। সোমবার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানান, বেলারুশে রাশিয়ার মহড়ার জবাবে এই পাল্টা মহড়া চালাবে কিয়েভ।
স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় সেনারা ক্রমাগত বিভিন্ন মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে তারা বিদেশি অংশীদারদের দেওয়া বায়রাক্টার ড্রোন এবং ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী জ্যাভলিন এবং এনএলএডব্লিউ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে মহড়া শুরু করবে।