চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ২৫ নভেম্বর থেকে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো সমাবেশ, মানববন্ধনের ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। আজ শনিবার ছাত্রদলের সমাবেশের মধ্য দিয়ে ৮ দিনের এ কর্মসূচি শেষ হবে। এখন প্রশ্ন এরপর কী করবে বিএনপি? আন্দোলনের কোন পথে হাঁটবে? একই গতির কর্মসূচি দেবে না জোরালো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে?
বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকারের মনোভাব দেখেই কর্মসূচি নির্ধারিত হবে। তবে তাদের অনেকে এও বলছেন সমাবেশ, মানববন্ধনের মতো নমনীয় কর্মসূচি দিয়ে কিছুতেই টলানো যাবে না সরকারকে। সরকার মুখের কথা গায়ে নিচ্ছে না। সিরিয়াস বিষয় নিয়েও তারা রসিকতা করছে।
খালেদার চিকিৎসা, নাকি সরকারবিরোধী আন্দোলন, কোন পথে বিএনপি? বিষয়টি নিয়ে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, সরকার পতনের আন্দোলন আগে থেকেই চলমান আছে। এটি চলবে। এখন বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায়। এই কর্মসূচি শেষে দল আরও কর্মসূচি দেবে। কিন্তু সরকার যদি পয়েন্ট অব নো রিটার্নে নিয়ে যায় তাহলে তো সংঘাতের আশঙ্কা থাকবেই। বিএনপি নয় বরং সরকার খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় বাধা দিয়ে রাজনীতি করছে।
বিএনপির তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বলে স্পষ্ট হয়েছে, দলটির নীতিনির্ধারকরা এখনও কঠোর কোনো কর্মসূচির কথা ভাবছেন না। তারা সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ কিংবা টানা অনশনের মধ্যেই থাকতে চান। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তারা কর্মসূচির গতি বাড়াবেন। আসতে পারে আল্টিমেটাম। তবে এটা নিশ্চিত, এই কর্মসূচির রাস টানবেন না। সরকার পতন আন্দোলনে রূপ দিতে চান। তারা মনে করেন, সম্প্রতি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সহানুভূতি তৈরি হয়েছে। জনমত সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরে থেকেও চিকিৎসার বিষয়ে চাপ আসছে। এ বিষয়টিকে তারা আরও বেশি কাজে লাগাতে চান। চালিয়ে যেতে চান। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরকারের আচরণ তুলে ধরতে চান। তারা চাইছে এই সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে। সে সঙ্গে চেষ্টা জনগণ ও বিশিষ্টজনের জোরালো বক্তব্য আদায় করতে। সরকারবিরোধী জনমত বাড়ানোর দিকেই মনোযোগ তাদের। এ জন্য তারা এখন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে লাগাতার কর্মসূচি দেবে। তবে সরকারের মনোভাবের দিকেও তারা খেয়াল রাখছে। কর্মসূচিগুলোতে অহিংস থাকতে নেতাকর্মীদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে।
তবে মধ্যম সারির ও তৃণমূল নেতাদের চাওয়া খালেদা জিয়ার বিদেশ চিকিৎসার ইস্যুতে দেশব্যাপী হরতাল-অবরোধের মতো জোরালো কর্মসূচি দেওয়া হোক। নইলে সরকারের টনক নড়ানো সম্ভব নয়। এবারের ইস্যুটি তাদের অস্তিত্বের। এখান থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই। এ যাত্রায় ব্যর্থ হলে নিজেদের রাজনীতিই সঙ্কটে পড়বে।
এখনই হরতাল না দেওয়ার কারণ হিসেবে নেতারা বলছেন, এমনিতেই নেতাকর্মীদের নামে অনেক মামলা। গত অনশন ও তার পরদিন সমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েকটি জেলায় অনেক মামলা হয়েছে। নতুন করে আরও মামলা হলে তা সামলানো কঠিন হবে।
কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর। প্রয়োজনে কর্মসূচি পরিবর্তনও হতে পারে। সেটা সময় হলে আপনাদের আমরা জানাব। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ সময়ের আলোকে বলেন, প্রথমবার কর্মসূচি দেওয়ার আগে যৌথ সভা হয়েছিল। এবার স্থায়ী কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আন্দোলন কর্মসূচি চলমান থাকবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে জনমত সৃষ্টি হওয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলনের দিকে যেতে চায় বিএনপি। বিশিষ্টজন বলছেন, এ নিয়ে রাজনৈতিক মেরুকরণের চেষ্টা না করাই ভালো। চিকিৎসা ইস্যু নিয়ে কোনো পক্ষেরই রাজনীতি করা সমীচীন নয়। সুযোগ থাকলে আবারও আইনি পথে হাঁটতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বিএনপিকে একটি অনুরোধ জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে আমি কোনো কথা বলছি না। আজ তারেকের উচিত প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ফোন করে বলা, আমাকে পছন্দ করেন আর না করেন, মায়ের জন্য সবাই দোয়া করেন। তার জীবন বাঁচান। তারেক আরও একশ বুদ্ধিজীবীকেও ফোন করে বলবেন, আপনাদের প্রতি অনুরোধ, আমার মায়ের জীবন বাঁচান।
ডা. জাফরুল্লাহর ধারণা, বিএনপি আদালতে গেলে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ মিলতে পারে খালেদা জিয়ার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, বিএনপির তাগাদাটা সমন্বিত হচ্ছে না। খালেদা জিয়ার বিদেশ চিকিৎসার বিষয়ে জনগণকে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে। নইলে দাবিটা কেন্দ্রীভূত হয়ে যাবে। সরকার পতন আর চিকিৎসাকে আলাদা রাখা উচিত। নইলে সরকার চিকিৎসার দাবিকে ‘হালকা’ ভেবে আমলে নাও নিতে পারে।