মাঠের বিরোধীদল বিএনপিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনতে সরকার সম্প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে। আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যাচ্ছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরাও চাই বিএনপি আসুক, একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হোক। বিএনপির মতো বড় একটা দল ভোটের বাইরে থাকবে, এটা আমরা চাই না।’
তবে বিএনপি বলছে, সরকারের এমন নরম সুরে তারা কান দেবে না। গতবার সরকারের ‘মিষ্টি কথার’ ফাঁদে পড়ে মাসুল দিতে হয়েছে তাদের। তাই এবার সতর্ক থাকবেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
মঙ্গলবার ইভিএম বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইলেকশন তো এ সরকারের অধীনে হবে না। ইলেকশন হবে ইলেকশন কমিশনের অধীনে। সরকার ক্রেডিবল, ফেয়ার অ্যান্ড ফ্রি ইলেকশনে যে যে সহযোগিতা দরকার, তা দেবে। তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা বিএনপির অধিকার। সরকারের সুযোগ দেওয়া বা ত্রাণ বিতরণ করা নয়। দল হিসেবে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে তারা অবশ্যই নির্বাচনে আসবেন। আমরা এটাই বিশ্বাস করি। দল হিসেবে আমরা বলেই যাচ্ছি। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনেও তাদের দাওয়াত দিয়েছি। খেয়াল করে খেন, আওয়ামী লীগের এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব আছে।
একদিন পর বুধবার ওবায়দুল কাদেরের কথার জবাব দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ সরকারের অধীনে আগে একবার নির্বাচন হয়েছিল, আমরা সে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। আমরা বিশ্বাস করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম, কিন্তু তারা দিনের ভোট রাতেই শেষ করে দিয়েছিল।
টুকু বলেন, সরকার এখন ইভিএম, ইভিএম করছে। অর্থাৎ রাতের বেলা সিল মারতে হবে না, ইভিএমে দিনের বেলা ঘরে বসেই সব ভোট নিয়ে নিতে পারবে। এ রকম নির্বাচনে আমরা যাব না। বিএনপি একটি সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন করতে চায়।
বিএনপি নির্বাচনে আসবে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের আশা করেন যে- আমরা নির্বাচনে যাব, তার তো কোনো কারণ নেই। তারা কোনো ভালো রেকর্ডও রাখেনি যে, আমরা যাব।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার সময়ের আলোকে বলেন, তাদের কথায় তো ২০১৮ সালেও নির্বাচনে গেলাম। কিন্তু রেজাল্ট তো সবার জানা। দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচনে কেউ যাবে না। আর বিএনপির অবস্থান তো পরিষ্কার। বারবার তাদের কথায় কেউ বিশ্বাস করবে না। বিশ্বাস করেই বিএনপি ভুল করেছে। আসন ভাগাভাগির নির্বাচনে যাব না আমরা। ইভিএম নিয়ে এই নেতার ভাষ্য, আওয়ামী লীগ এখন থেকে ৩০০ আসনে ইভিএম চায়। এতে বোঝা যায়, তাদের মতলব খারাপ।
বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে পারলে সরকার বৈধতা পায় উল্লেখ করে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ সময়ের আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ তো চাইবে নির্বাচনে নিতে। আর নির্বাচনে নিতে পারলে বহির্বিশ্বে বৈধতা পাবে। কেননা গত নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করতে নানা কৌশল করছে ক্ষমতাসীনরা। তিনি বলেন, বিএনপিকে ভোটে এনে পাঁচটা সিট ধরিয়ে দেবে- এবার তা সম্ভব হবে না। দলীয় কোনো সরকারের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না তা ২০১৮ সালে প্রমাণ হয়েছে। তাই আমরা দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেব। এ ছাড়া ভিন্ন কোনো চিন্তা নেই।
আর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ অতীতেও নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা কাণ্ড-কারখানা ও কৌশল করেছে। এবারও শুরু করেছে। বারবার জনগণকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। বিএনপিকেও টোপে ফেলা হয়েছে। তবে এবার আর বিএনপি সেই টোপে পড়বে না। জনগণও সেই প্রতারণার ফাঁদে পা দেবে না।
এক দাবিতে অনড় থাকা বিএনপি দাবি আদায়ে নতুন কোনো পরিকল্পনা করবে কি না, জবাবে দলটির নেতারা জানান, প্রশাসনের ভাবমূর্তি দেখে সামনে নতুন কৌশল করবে তারা।