মেসেঞ্জার গ্রুপের একটি মন্তব্যকে রাষ্ট্রবিরোধী আখ্যা দিয়ে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেফতাহুল মারুফকে পুলিশে দেওয়ার ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন। তবে, অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থীর মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
জানা গেছে, মারুফ তাদের ব্যাচের চৌদ্দশিখা মেসেঞ্জার গ্রুপে লেখেন, ‘সিরিজ বোমা হামলা চালাইছে জামায়াতুল মুজাহিদিন নামে একটা জঙ্গি সংগঠন বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে। সেই সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি জামায়াত। এই ক্ষমতায় থাকার জন্য যদি দায়ী তারা হয়, তাহলে ২০০৮-বর্তমানে গুলশানসহ সকল জঙ্গি হামলার জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ।’
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার সংবাদমাধ্যমকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মারুফকে থানায় সোপার্দ করে মৌখিকভাবে তাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করে।
অভিযোগে বলা হয়, ১৭ অগাস্ট মারুফ তাদের ডিপার্টমেন্টের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে রাষ্ট্রবিরোধী চ্যাট করেছেন এবং তার ফেসবুকে জামায়াত-শিবিরের দুটি পেজে তার লাইক পাওয়া গেছে। সে কোনো অশুভ কর্মকাণ্ডে জড়িত আছে কি না, বিষয়টি যাচাই করতে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
ওসি বলেন, “আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখেছি, এটা একটা ক্লোজড গ্রুপে তার ব্যক্তিগত মতামত ছিল। যে দুটি গ্রুপে লাইক দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেখানে আমরা তার কোনো কমেন্টস-রিঅ্যাকশন বা কর্মকাণ্ড পাইনি।”
তবে ওই শিক্ষার্থী দাবি করেছে, সে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড দেখার জন্য লাইক দিয়েছে। আমরা তার পারিবারিক বিষয়ও যাচাই করেছি। সব মিলিয়ে এমন কোনো কিছু পাওয়া যায়নি, যা দ্বারা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা বা তাকে আদালতে চালান করা যায়। তাই তার মুচলেকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।”
থানা থেকে ছাড়া পেয়ে সাংবাদিকদের কাছে মারুফ অভিযোগ করেন, ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার কারণে এক সহপাঠী তাদের ব্যাচের মেসেঞ্জার গ্রুপের স্ক্রিনশট নিয়ে হল ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্তকে দেখায়। পরে শান্ত তার মোবাইল কেড়ে নেয় এবং ছাত্রলীগের কর্মীদের দিয়ে তাকে হল প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে নিয়ে আসে। ছাত্রলীগের চাপে হল প্রাধ্যক্ষ তাকে থানায় দিয়েছে।
মারুফ বলেন, ‘হলের প্রাধ্যক্ষ আমাদের অভিভাবক। তিনি চাইলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সমাধান করতে পারতেন। কিন্তু ছাত্রলীগের কথায় তিনি সামান্য একটা বিষয় নিয়ে আমাকে পুলিশে দিয়ে হয়রানি করেছেন। ক্যারিয়ারে একটা কালিমা লেপন করার চেষ্টা করেছেন। হল প্রাধ্যক্ষকের কাছে আমি এটা কখনো আশা করিনি।’
এদিকে, শিক্ষার্থী হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন ‘স্টুডেন্ট এগেইনস্ট টর্চার (স্যাট)’ প্ল্যাটফর্মের নেতা-কর্মীরা।
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, “মেসেঞ্জার গ্রুপে সে যা লিখেছে, আমাদের কাছে তা রাষ্ট্রবিরোধী মনে হয়েছে। তাছাড়া জঙ্গি সংগঠনের দুটি পেইজে সে লাইক দিয়েছে। আমাদের পক্ষ যতটুকু সম্ভব আমরা যাচাই করেছি। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় তাকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে, যাতে অধিকতর তদন্ত করে সত্যটা উদঘাটন করা যায়।