মানুষ হাসিমুখে কথা বলা পছন্দ করে। গোমড়ামুখে, কর্কশ ভাষায় কথা বলা দোষের দৃষ্টিতে দেখে। মুখে হাসি ফুটিয়ে কোনো আদেশ করলেও মানুষ স্বচ্ছন্দে তা পালন করে। কোনো কথা বললে নিঃসঙ্কোচে গ্রহণ করে। একচিলতে হাসি দিয়েও মানুষের মন জয় করা যায় কখনও। মনের ক্রোশ ক্রোশ দূরত্ব মুহূর্তেই ঘুচিয়ে ফেলা যায়। শুধু তাই নয়, অন্যের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বললে সদকার সওয়াব হয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ধন-সম্পদ দান করার দ্বারা তোমরা ব্যাপকভাবে লোকদের সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হবে না; কিন্তু মুখমণ্ডলের প্রসন্নতা ও প্রফুল্লতা এবং চরিত্র মাধুর্য দ্বারা ব্যাপকভাবে তাদের সন্তুষ্ট করতে পারবে।’ (বুলুগুল মারাম : ১৫৩৪ )
একটুকরো মুচকি হাসি সীমাহীন ক্রোধের আগুন নিভিয়ে দেয়। সন্দেহ-সংশয়ের নিকষ কালো অন্ধকার মুহূর্তেই শেষ করে দেয়। ইমাম বুখারি (রহ.) তার কালজয়ী গ্রন্থে ‘মুচকি হাসি’ নামে একটি অধ্যায় এনেছেন। আল্লামা ইবনে বাত্তাল (রহ.) বলেন, মুচকি হাসির মাধ্যমে সাক্ষাৎ করা রাসুল (সা.)-এর আদর্শ এবং এটা অহঙ্কারের পরিপন্থি আর দুজনের মধ্যে ভালোবাসার সহায়ক। (শরহুল বুখারি : ৫/১৯৩)। এজন্যই রাসুল (সা.) সাহাবাদের সঙ্গে মুচকি হাসি ছাড়া কখনই কথা বলতেন না। হজরত জারির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি, তখন থেকে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাকে তাঁর কাছে প্রবেশ করতে বাধা দেননি এবং যখনই তিনি আমার চেহারার দিকে তাকাতেন, তখন তিনি মুচকি হাসতেন।’ (বুখারি : ৩০৩৫)
মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা একটি সুন্নাত। নবীজি (সা.) সবসময় মুচকি হেসে সাহাবায়ে-কেরামের সঙ্গে কথা বলতেন। এমনভাবে বলতেন যে, তাদের প্রত্যেকেই মনে করতেন- আমাকেই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন আমার প্রিয় নবী। কতটা উত্তম ব্যবহারের অধিকারী হলে একজন মানুষের ব্যাপারে সবার ধারণা এমন হতে পারে! এভাবে নবীজি (সা.) তাদের কাছে টেনে আপন করে নিতেন। ফলে সাহাবায়ে-কেরামও তাদের মনের কথা বলতে পারতেন নিঃসঙ্কোচে। সব সমস্যার সমাধান জেনে নিতেন সহজেই। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজই একটি সদকা। আর তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলাও ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি : ১৭৯০)। অর্থাৎ নবীজি (সা.) হাসিমুখে কথা বলাকে সদকা বলেছেন। এর বিনিময়ে আমরা সওয়াব লাভ করতে পারব।
নবীজি (সা.)-এর প্রতিটি সুন্নতেই প্রভূত কল্যাণ রয়েছে। কখনও আমরা তার কিছু খুঁজে পেলেও অধিকাংশ সময়ই এসব সুন্দর দিক আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। মূলত আমরা এগুলো নিয়ে তেমন চিন্তা-ভাবনা করি না। গুরুত্ব দিই না সুন্নতকে। অথচ নবীজির (সা.) উম্মত হিসেবে আমাদের কর্তব্য ছিল তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করা। তিনি যে কাজ যেভাবে করেছেন সেভাবে করতে চেষ্টা করা। তা হলে দুনিয়া ও আখেরাত- উভয় জাহানে এর সুফল ভোগ করতে পারব। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নবীজির (সা.) সব সুন্নতের ওপর আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।